আমরা এখানে আলোচনা
করবো আপনি কি ভাবে
আপনার সখের বাগানকে মিলিবাগের
হাত থেকে নিরাপদ রাখবেন।
প্রথমে
জানতে
হবে
মিলিবাগ
কি
?
![]() |
লেবুগাছে মিলিবাগের আক্রমন |
মনে করুন আপনি
একটি বাগান তৈরী করেছেন
, আপনার বাগানে আছে অনেক
ধরণের গাছ। তারা
নিয়মিত ফুল -ফল দিচ্ছে। হঠাৎ
একদিন দেখলেন কোন একটি
গাছের পাতার নিচে ছোট্ট
একটি সাদা তুলোর মত
জমে আছে। ভাবলেন,
হয়ত তুলোই হতে পারে। কিন্তু
কিছু দিনের মধ্যেই দেখা
গেল বাগানের অন্যান্য সব গাছের পাতার
নিচে, পাতার গোড়ায় এমন
সাদা সাদা তুলোর মত
দেখা যাচ্ছে । দিন
দিন এমন তুলোর পরিমাণ
বাড়তে লাগল আর আপনার
গাছের ফলনের পরিমাণ কমতে
লাগল। গাছগুলোর
পাতা এলোমেলোভাবে কুঁকড়ে গেল, ফুল
দেওয়া কমে গেল, ফল
দেওয়া কমে গেল।
কিছুদিন বাদে দেখা গেল
গাছগুলোর পাতা কালচে আবরণে
ঢেকে যাচ্ছে। গাছ
দূর্বল হয়ে পড়ছে ধীরে
ধীরে। অথচ
আপনি কিছুই বুঝতে পারছেন
না। নিশ্চিত
থাকুন যে আপনার সাধের
বাগানের গাছ মিলিবাগ দ্বারা
আক্রান্ত হয়েছে। যদি
সময়মত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়
তবে ক্ষতির আশঙ্কা বেড়েযাবে।
![]() |
টমেটোগাছে মিলিবাগের আক্রমন |
![]() |
কাঁঠালগাছে মিলিবাগের আক্রমন |
মিলিবাগগুলো আকারে ছোট, ২.৫ – ৪ মিলিমিটার
হয়েথাকে, তবে এদের মধ্যে
জায়ান্ট মিলিবাগ প্রায় ১ সেন্টিমিটার
পর্যন্ত এটি হতে পারে। স্ত্রী
পোকার পাখা নেই বলে
উড়তে পারে না এবং
নিম্ফের মত দেখায় তবে হাটতে
পারে।
![]() |
পেপেগাছে মিলিবাগের আক্রমন |
আক্রমণের লক্ষণ:
ü এরা পাতা ও
ডালের রস চুষে নেয়
ফলে গাছ দুর্বল হয়ে
পড়ে।
ü
পোকার
আক্রমনে পাতা, ফল ও
ডালে সাদা সাদা তুলার
মত দেখা যায়।
ü
অনেক
সময় পিপড়া দেখা যায়।
ü এর আক্রমণে অনেক
সময় পাতা ঝরে যায়
এবং ডাল মরে যায়।
আক্রমণের পূর্বে
করণীয়ঃ
ü নিয়মিত বাগান পরিদর্শন
করুন|
ü
১৫০০
পি. পি. এম. নিমতেল
নিয়মতি ব্যবহার করলে উপদ্রব অনেকটাই
কামানো সম্ভব |
ü
গাছের
গোড়ার মাটি থেকে ১৫-২০ সেমি উপরে
স্বচ্ছ পলিথিন দ্বারা মুড়ে
দিতে হবে যাতে মিলিমাগ
গাছে উঠতে না পারে।
![]() |
মিলিবাগের বন্ধু পিঁপড়া |
ü
পিপড়া
মিলিবাগের নিঃসৃত মিষ্টি মধু
খেতে পছন্দ করে।
তাই বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়
যেখানে মিলিবাগ আছে সেখানে পিপড়াও
আছে। পিপড়ারা
অ্যাফিড, স্কেল পোকার মতই
মিলিবাগও লালন পালন করে
থাকে মিষ্টি রসের জন্য। খেয়াল
করলে দেখা যায় পিপড়া
ছোট ছোট মিলিবাগের নিম্ফগুলোকে
কচি ডগায় পৌছাতে সাহায্য
করে। মাঝে
মাঝে মুখে করে তুলেদ্রুত বহন করে নিয়ে
যায়। নিম্ফ
মাটিতে পড়ে গেলে পিপড়া
তাদের আবার তুলে গাছের
উপর উঠিয়ে দেয়| মিলিবাগের
প্রধান ঢাল হল তার
মোমের মত আবরণ।
এ আবরণের কারণে সাধারণ
কীটনাশক তার গায়ের ত্বক
পর্যন্ত পৌছায় না সহজে। তাই
কীটনাশক দেওয়ার পরেও মিলিবাগ
বহাল তবিয়তেই বেঁচে থাকে।
এর জন্য দরকার সমন্বিত
বালাই ব্যাবস্থাপনা। সহজেই বোধগম্য যে মিলিবাগ কে আয়ত্তে আনতে চাইলে তাকে দূর্বল করার মোক্ষম অস্ত্র হল তার বন্ধু পিপড়া কে হটিয়ে দেওয়া। আর তা হলেই মিলিবাগ অর্ধেক দূর্বল হয়ে পড়বে।
ü
বছরের
সংক্রমিত ফসলের উচ্ছিষ্ট এবং
আগাছা থেকে নতুন ফসলে
কীট সহজেই ছড়াতে পারে। তাই,
উচ্ছিষ্ট এবং আগাছা সংগ্রহ
করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। জমি
আগাছামুক্ত রাখতে পারলে পিপড়ার
এবং মিলিবাগের আশ্রয় ধ্বংস হয়
এবং আক্রমন অনেকটাই কমিয়ে
আনা যায়|
![]() |
Cheilomenes sexmaculata |
![]() |
Scymnus coccivora |
ü
শত্রুর
শত্রু হল বন্ধু, তাই
আমরা খোজ করতে পারি
মিলিবাগের শত্রুদের। Coccinelidaeপরিবারের Cheilomenes
sexmaculata, Rodolia fumida, Scymnus coccivora এবং
Nephus regularis হল মিলিবাগের জাত শত্রু।
এ ছাড়াও Cryptolaemus
montrouzieri (অস্ট্রেলিয়ান
লেডিবার্ড), Anagyrus
pseudococci, Leptomastix dactylopii, এক ধরণের
মাইট), Verticillium
lecanii (ছত্রাক) এবং Beauveria bassiana (ছত্রাক) মিলিবাগের শত্রু হিসাবে পরিগনিত
হয়েছে।
Cheilomenes sexmaculata যাকে
লাল মাথা লেডিবার্ড হিসেবে
দেখা আখ্যায়িত করা হয়, তারা
ডিম পড়ে মিলিবাগের
ডিমের গাদায়। ডিম
থেকে কীড়া বের হয়েই
মিলিবাগের ডিম খেতে শুরু
করে। ২
মাস আয়ুস্কালে ৩০০০-৫০০০ মিলিবাগ
খেতে সক্ষম। হেক্টরে
৫০০০ লেডিবার্ড পোকা পুরো জমিকে
মিলিবাগ মুক্ত
রাখতে পারে। ছত্রাক)
অথবা Beauveria
bassiana ৫
গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে
স্প্রে করলে ছত্রাক মিলিবাগ
কে সংক্রমন করে এবং তাকে
ধিরে ধিরে মেরে ফেলে।
আক্রমণের পর
করণীয়ঃ
ü আক্রান্ত পাতা ও ডগা
ছাঁটাই করে ধ্বংস করা।
ü
সম্ভব
হলে হাত দিয়ে ডিম
ব বাচ্চার গাদা সংগ্রহ করে
ধ্বংস করা।
ü
জৈব
বালাইনাশক আস্থা কিলার ১৫(১৫০০ পি.পি. এম . ) নিম
তেল প্রতি লিটার জলে
2 মিলি মিশিয়ে স্প্রে
করতে হবে
মিলিবাগের
সংখ্যা যদি এতই বেশি
হয় যে আর কোনভাবেই
তাদের আয়ত্তে আনা যাচ্ছে
না তবে শেষ অস্ত্র
হিসেবে বাকি থাকে কেমিক্যাল
ব্যাবহার করা।
ü আস্থা ইমিডাফ্লু (ইমিডাক্লোরপিড ১৭.৮ % এস এল) প্রতি লিটার জলে ০.২৫ মিলি. - ০.৫ মিলি. মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে|
ü
আস্থানাইট (ক্লোরোপাইরিফস ( এ,আই ) = ১৬% W/W
+ আলফাসাইপারমেথ্রিন ১% W/W)
২
.০ – ২
.৫ মিলি প্রতি লিটার
জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে
হবে|
ü
যেকোনো
স্প্রে ব্যবহার করার সময় সম্ভব হলে আস্থা স্টিকি বা অন্য কোনো আঠাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতে পারলে পেস্টিসাইডের
কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় |
এই
কীটনাশকের কোন
একটি অথবা যৌথভাবে ১৫
দিন পর পর স্প্রে
করতে হবে। মনে
রাখতে হবে এই কীটনাশকগুলো
স্প্রে করার পর ১৫
দিন ফসল তোলা যাবে
না। স্প্রে
করার সময় মাস্ক, গ্লাভস
এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা আবলম্বন করতে হবেই।
আরো একটি ব্যাপার মনে
রাখার মত, তা হল
যদি অল্প মাত্রায় কীটনাশক
প্রয়োগ করা হয় তবে
কীট মরবে না বরং
পরের বংশধারায় ওই কীটনাশকের প্রতি
সহনশীলতা তৈরি হবে এবং
কীট মরবে না।
তাই অবশ্যই উপদেশকৃত মাত্রায়
কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে
এবং কিছুদিন পর পর কীটনাশকের
গ্রুপ পরিবর্তন করতে হবে।